কথায় আছে, মানুষ যখন প্রেমে পড়ে তখন অন্ধ হয়ে যায়। ব্যাপারটি নিছক কথার কথা না; এর একটি রাসায়নিক ব্যাখ্যা কিন্তু আছে। কম বয়সী তরুণ তরুণীরা প্রেমের প্রথম দিকের পাগলামী গুলোকে ভালোবাসার সব চাইতে সুন্দর সময় মনে করলেও মনোবিজ্ঞানীরা বলছে এসব কিছুই এক ধরনের মানসিক অসংলগ্নতা।
ভালোবাসার প্রথম দিকে অক্সিটোসিন নামক এক হরমোনের উপস্থিতি ভালোবাসার মানুষটির বিরক্তিকর অংশ গুলো চোখের সামনে থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। যখন আবেগতাড়িত হয়ে একজন অন্যজনের চোখের দিকে তাকায়, হাত ধরে প্রতিজ্ঞা করে, কেটে ফেলে দিলেও এই হাত তারা ছাড়বেই না তখন ওপাশের মানুষটার দোষ ক্রুটির সহজাত প্রবৃত্তি গুলো তাদের চোখে পড়ে না।
একসময় তাদের মস্তিস্কের রাসায়নিক ক্রিয়ার পরিবর্তন হতে শুরু করে এবং তখনই মনে হতে থাকে , মানুষটা আমাকে আগের মত ভালোবাসে না। শেক্সপিয়ার লিখেছিলেন, দাম্পত্য জীবন হল এমন একটি উপন্যাস যার প্রথম পরিচ্ছেদেই নায়কের মৃত্যু ঘটে।
ভালোবাসার প্রথম পর্ব ফ্যান্টাসির হলেও দ্বিতীয় পর্ব হয় সন্ন্যাসীর। একে অন্যের সাথে অনেক বেশি সময় এক সাথে থাকার কারণে তাদের ভেতরে আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। মতপার্থক্য , সে আমার প্রতি আগের মত মনযোগী না , ছোট ছোট রাগ অভিমান জমিয়ে রাখতে রাখতে একই ছাদের নিচে থেকেও তারা একধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
কথায় আছে, মেয়েরা আশা করে ছেলেরা বিয়ের পরে বদলাবে, কিন্তু তা হয় না। আর ছেলেরা আশা করে মেয়েরা বিয়ের পরেও একইরকম থাকবে, কিন্তু তারা বদলে যায়। দুটা মানুষের ভেতরে ভালোবাসা থাকা স্বত্বেও এই সময়টাতে এসে অনেকেই ডিভোর্স নিচ্ছে কেননা শুধু মাত্র ভালোবাসাই তাদের একসাথে থাকার জন্য যথেষ্ট না।
রবীন্দ্রনাথ শেষের কবিতায় এর একটি সমাধান দিয়ে গেছেন, লোকে ভুলে যায় দাম্পত্যটা একটা আর্ট, প্রতিদিন ওকে নতুন করে সৃষ্টি করা চাই ”
আমরা চাইলেই কাউকে কখনো সব সময় একই রকম ভাবে ভালোবাসতে পারি না; কিন্তু আমরা চাইলেই কাউকে চিরদিন ভালোবেসে যেতে পারি।
