• একচিলতে রোদ

    একচিলতে রোদ






    কনকনে শীত । ঘন কুয়াশায় ঘেরা চারপাশ ,
    একটু দুরেই বাঁধা পড়ে দৃষ্টি । তারপর আবার
    কুয়াশা । গাঢ় , সাদা কুয়াশা ।
    .
    হ র র র . . হট . . হট . .
    দশটি রুগ্ন পা একসাথে একই ছন্দে চলছে ।
    সেই সাথে চলছে রূপালী লাঙল ,
    চলছে জীবনের লাঙল . . . .
    গরু দুটোর স্বাস্থ্যের অবস্থা খুব খারাপ ,
    যতটা ওদের মালিকের । কেমন ঠকঠক
    করে কাঁপছে ওরা , যেমনটা কাঁপছে ওদের
    মালিকও । ওদের গায়ে যেমন কোন কাপড়
    নেই , তেমনি ওদের মালিকের শরীরও প্রায়
    পুরোটাই খালি ।
    পরনে একটা ছেড়া গামছা চাড়া আর কিছুই
    নেই ।
    .
    কলিম শেখের সম্বল বলতে এই দুটো গাই গরু ,
    আর এক টুকরো আবাদি জমি । মাঝেমাঝে গরু
    দুটোর জন্য তার খুব মন খারাপ হয় । গরু
    দুটোর জীর্নশীর্ন শরীর দেখলে খুব
    মায়া লাগে । কলিম শেখের ধারনা তার
    শরীর দেখে গরু দুটোরও হয়ত মন খারাপ হয় ,
    মায়া হয় । মুখে হয়ত ওরা কিছুই
    বলতে পারে না , কিন্তু মাঝেমাঝে কেমন
    যেন মলিন দৃষ্টিতে তার
    দিকে তাকিয়ে থাকে ওরা !
    .
    কিরে ! গায়ে জোর নাই ! খাড়াইলি কেন ?
    চল চল , টান লাগা . .
    হ র র র . . হট . . হট . .
    কলিম শেখ গরু দুটোর সাথে অনবরত
    কথা বলে যাচ্ছে , আর গরু দুটো হাল
    টেনে চলেছে বিরামহীন । লাঙলের পলায়
    জমির বুক চিড়ে খন্ড বিখন্ড হয়ে যাচ্ছে ।
    কলিম শেখ বড় বড় চোখ
    করে তাকিয়ে আছে খন্ডিত মাটির
    টুকরোগুলোর দিকে । এ যেন মাটি নয় , এক
    এক টুকরো স্বপ্ন ।
    ধোঁয়াতোলা ধবধবে সাদা ভাতের
    স্বপ্ন . . . .
    .
    কলিম শেখের দুই ছেলে , দুই মেয়ে ।
    ছেলে দুটো বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে ।
    আর মেয়ে দুটোরও বিয়ে হয়ে গেছে সেই
    কবে ।
    .
    অনেক , অনেকদিন আগে বাবা রজব শেখ
    কলিমের হাতে তুলে দিয়েছিলেন এই লাঙল-
    জোয়াল । তখন কলিমের বয়স বার কি তের
    হবে । দীর্ঘ এতগুলো বছর কলিম শেখ সেই
    লাঙ্গল-জোয়ালের ভার বহন করে চলেছেন ।
    জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসেও এতটুকু
    বিশ্রাম নেই , এতটুকু ক্লান্তি নেই ।
    ক্লান্তি হয়ত আছে , কিন্তু
    সেটা মেনে নিতে তিনি একেবারেই নারাজ
    । তাইতো আজও শক্ত হাতে ধরে রেখেছেন
    জীবনলাঙলের হাতল . . . .
    .
    ছেলে-মেয়েরা চেড়ে গেলে কি হবে , একজন
    কিন্তু এখনো চেড়ে যায় নি কলিম শেখকে ।
    যাকে তিনি পষ্ণাশ বছর আগে পেয়েছিলেন
    কোন এক ঝড়ের রাতে । সেই রাতের
    কথা কলিম শেখের স্মৃতিতে আজও উজ্জল ,
    যেন এই সেদিনের কথা . . . .
    .
    কলিম শেখের বয়স তখন ষোল কি সতের ।
    কি যেন এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হলেন রজব
    শেখ । বাঁচার কোন আশা নেই আর । একদিন
    রাতে তিনি সবাইকে ডেকে বললেন , আজ
    রাতেই তার সময় শেষ । মৃত্যুর
    আগে তিনি ছেলের বউয়ের মুখ দেখতে চান ।
    তাই তাড়াহুড়ো করে সেই রাতেই কলিম
    শেখের বিয়ে দেয়া হয় পাশের গ্রামের
    “নছিমন বেওয়া ” এর সাথে । নছিমনের
    গায়ের রং কিছুটা কালো ছিল । তাই বাসর
    রাতে নছিমনকে দেখে কলিম শেখের মুখটাও
    কিছুটা কালো হয়ে গেল ।
    ততক্ষনে বাহিরের আকাশটাও
    কালো হয়ে গিয়েছিল হয়ত । শুরু হল প্রচন্ড
    ঝড় । ভোর রাতের দিকে ঝড় থেমে গেল ,
    সেই সাথে থেমে গেল রজব শেখের জীবন
    প্রদীপও । কি অদ্ভুত ব্যাপার !
    লোকটা আগেই টের পেয়ে গিয়েছিল তার
    মৃত্যুর কথা !
    .
    হ র র র . . হট . . হট . .
    কলিমের চোখে পানি । অস্ফুট
    স্বরে তিনি বলে উঠলেন , কেমন আছেন
    আব্বা . .
    তারপর উত্তর দিকের ঐ ঝোপঝাড় ঘেরা পুকুর
    পাড়টার দিকে তাকালেন । সেখানেই
    ঘুমিয়ে আছেন রজব শেখ গত পষ্ণাশ বছর
    ধরে . . . .
    .
    দীর্ঘ এই জীবনে কলিম শেখ অনেক কিছুই
    হারিয়েছেন , অনেকেই
    তাকে চেড়ে চলে গেছে । কিন্তু সেই
    কালো মেয়েটি আজো রয়ে গেছে তার পাশে ।
    কলিম শেখ এবার হাল চেড়ে বসে পড়লেন ।
    কুয়াশা তাকে চারপাশ
    থেকে ঘিরে ধরেছে যেন । কলিম শেখ
    জানেন নছিমন আর বেশী দিন
    থাকবে না তার সাথে , যে কোন সময়
    চলে যেতে পারে ওপারের ঠিকানায় । গত
    পষ্ণাশ বছর ধরে এই কালো মেয়েটাই তার
    জীবনকে আলোকিত করে রেখেছিল , সেই
    আলো আজ নিভু নিভু ।
    .
    কলিম শেখ ভেবেই পায় না ,
    কিভাবে নছিমন বিহীন
    দিনগুলো কাটবে তার । প্রতিদিন
    সকালে কে ঘুম ভাঙিয়ে দেবে ? কে পানের
    খিলি বানিয়ে দেবে ? কাজ থেকে ফেরার
    পর কে শাড়ির আঁচলে ঘাম মুছে দেবে ?
    কে তালপাতার পাখায় ক্লান্তিহীন বাতাস
    করে যাবে ? জোছনা রাতে কে চাঁদের বুড়ির
    গল্প শুনাবে ? ঘুম না আসলে কে মাথায়
    বিনি কেটে দেবে ? ঝড়ের রাতে যখন
    বাবার কথা মনে পড়বে , তখন
    কে তাকে সান্তনা দেবে ?
    .
    নছিমনকে চাড়া একটি মুহুর্তও
    কল্পনা করতে পারেন না কলিম শেখ । সেই
    নছিমন আজ ধীরে ধীরে মৃত্যুর
    দিকে এগিয়ে চলেছে , অথচ তার কিছুই
    করার নেই . . . .
    .
    কলিম শেখ
    ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন . .
    গাই দুটো ঘাড় বাকা করে তাকিয়ে আছে তার
    দিকে । কি অদ্ভুত ব্যাপার ! গাই দুটোর
    চোখগুলোও কেমন ভেজা . . ! !
    .
    ঐতো সূর্য উঠে গেছে । কুয়াশা কাটতে শুরু
    করেছে । নরম রোদে চারপাশটা উজ্জল
    হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে । কলিম শেখও
    উঠে দাড়ালেন সত্তর ছুঁইছুঁই জরাজীর্ন এক
    শরীর নিয়ে । মাটির টুকরোয়
    জমে থাকা ফোঁটায় ফোঁটায় শিশির
    বিন্দুগুলো শুকাতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে ।
    শুকাতে শুরু
    করেছে কোঠরে লুকিয়ে থাকা কলিম শেখের
    অশ্রুসিক্ত ছোট্ট ছোট্ট চোখ দুটোও ।
    .
    হ র র র . . হট . . হট . .
    স্বপ্ন কখনো মরে না ,
    কখনো থেমে থাকে না ।
    গরু দুটোর কাঁধে ভর
    দিয়ে এগিয়ে চলেছে জোয়াল , লাঙল । সেই
    সাথে এগিয়ে চলেছে কলিম শেখের স্বপ্ন ।
    নছিমনকে নিয়ে আরও অনেক দিন
    বেঁচে থাকার স্বপ্ন . . . .
  • GET A FREE QUOTE NOW

    Lorem ipsum dolor sit amet, consectetuer adipiscing elit, sed diam nonummy nibh euismod tincidunt ut laoreet dolore magna aliquam erat volutpat.

    ADDRESS

    4759, NY 10011 Abia Martin Drive, Huston

    EMAIL

    contact-support@mail.com
    another@mail.com

    TELEPHONE

    +201 478 9800
    +501 478 9800

    MOBILE

    0177 7536213 44,
    017 775362 13