অনামিকার সাথে দেখা হলো প্রায় তিন বছর পর! দেখাটা ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত। আমি বিকেলে কলেজ থেকে বাসে করে বাসায় ফিরছিলাম। সারদিনের ক্লান্তিতে বাসে বসে কেমন চোখ লেগে আসছিলো।
বাসের ঠিক মাঝের দুয়েকটা সিট আগে আমি বসেছিলাম। এরমধ্য বাস কিছুক্ষণ পর থামছিল আবার যাচ্ছিলো। হঠাৎ করেই ড্রাইভার মামার কড়া ব্রেকে কেমন ভড়কে উঠে সামনের দিকে তাকালাম।
ড্রাইভারের বা পাশের মহিলা সিট থেকে বোরখার উপর দিয়ে একজোড়া চোখ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে! প্রথমে অতোটা খেয়াল করিনি। যখন আমার দিক থেকে চোখদুটো এক মুহুর্তের জন্যও সরাচ্ছিল না তখন বেশ অবাক হলাম। এবার একটু খেয়াল করতেই আমি কেমন থতমত খেলাম। এই চোখদুটো যে আমার অনেক দিনের চেনা!
অনামিকার বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়। যেদিন বিয়ে ঠিক হয়। সেদিন অনামিকা সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে আমার কাছে এসেছিল। কিন্তু, তখন আমি আমার অনিশ্চিত জীবনের কথা ভেবে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম,
অনামিকা, তোমাকে সুখে দেখলেই আমি সবথেকে বেশী সুখি হবো। সেদিন অনামিকা আর একটা কথাও বলেনি। শুধু অঝোরে কেঁদেছিল!
আজ এতো বছর পরে এভাবে দেখা হবে হয়তো দুজনের কেউ'ই ভাবিনী! আমি ওর চোখ এড়িয়ে বাসের জানালা দিয়ে আকাশ দেখার চেষ্টা করলাম। নাহ! আকাশ দেখার কোনো অধিকারই নেই আমার।
অনামিকা সবসময় বলত, আমাকে শুধু, তোমার নিজস্ব আকাশ করে রেখো? অথচ, আমি তাকে সেই অধিকারটুকুই দিই নাই।
কি সব ভাবছিলাম এটা ওটা। বাস চলছিল তার আপন গতিতে। তারপর, হঠাৎ করেই বাসের হেলপার বলে উঠল, ওস্তাদ ব্রেক। নামবার আছে। আমি উঠে দাঁড়ালাম। ব্যাগটা কাধে চেপে যতটা সম্ভব অনামিকার চোখকে এড়িয়ে আস্তে আস্তে গেটের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলাম। কিন্তু, একটু সামনে যেতেই মেয়েটার চোখাচোখি পড়ে গেলাম।
অনামিকার চোখদুটো ছলছল করছিলো। বার কয়েক দুয়েক ফোটা জল গড়িয়েও পড়ল। ওকে দেখার পর আমার যে নিঃশ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো। সেটা যেন তখন মুহুর্তেই কয়েকশত গুণ ভারী হয়ে গেল। আমি বা হাত দিয়ে কাধের ব্যাগটার ফিতা ধরার মত করে বুকের বা পাশটা শক্ত করে চেপে ধরে বাস থেকে নেমে এলাম।
বাস ছেড়ে গেল। ফুটপাত ধরে হাটতে শুরু করলাম। তারপর, আবার আকাশের পানে দিকে তাকিয়ে বললাম,
অনামিকা , অনেকগুলো বছর পর তোমাকে শুধু সুখি দেখতে চেয়েছিলাম। তোমার চোখের জল নয়!
লেখাঃ আবির
ছবিঃসংগ্রহীত
ছবিঃসংগ্রহীত